অনলঅইন ডেস্ক: চট্টগ্রামের অভিজাত চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে মাদক বিক্রির এক কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং পাঁচ হাজার ৩০০ পিস ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা দম্পতিকে গ্রেফতারের ঘটনায় অবাক এলাকাবাসী। দৈহিক গঠন ও ভাষার মিল থাকায় তাদের অনেকে বাংলাদেশি ভাবতেন। এ সুযোগ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মিশে যান তারা। নগরের একেবারে কেন্দ্রে বসে চালাতে থাকেন মাদকের কারবার।
গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের তিনটি জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। কিন্তু যাচাই-বাছাই শেষে সেগুলো নকল প্রমাণিত হয়। এছাড়া যে পরিচয়ে তারা চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন, তাও ছিল ভুয়া।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, শওকত ইসলাম ও তার স্ত্রী মোরজিনা দুজনই মিয়ানমারের নাগরিক। ২০০৮ সালে কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন শওকত। এরপর থেকে তিনি চট্টগ্রাম শহরে বসবাস শুরু করেন। পরিবারের সঙ্গে ২০১২ সালে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেন মোরজিনা। পরে তাদের দুজনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই এই দম্পতি ইয়াবা চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত।
র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আলী আশরাফ তুষার জাগো নিউজকে বলেন, শওকত ইসলাম দেশে ইয়াবা পাচারকারী চক্রের সদস্য। তিনি নিজে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে আসতেন। পরে চট্টগ্রামের বাসা থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতেন তিনি। ইয়াবা ব্যবসার আর্থিক বিষয় দেখাশোনা করতেন তার স্ত্রী মোরজিনা।
এদিকে গ্রেফতারের পর রোহিঙ্গা দম্পতির বিরুদ্ধে নগরের চান্দগাঁও থানায় দুটি মামলা করেছেন র্যাব কর্মকর্তা মো. আবদুল হক। মামলার পর দুজনকে পুলিশে হস্তান্তর করে র্যাব।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান খোন্দকার জাগো নিউজকে বলেন, র্যাবের করা মামলায় ওই দম্পতির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে শওকত ইসলামের স্ত্রী মোরজিনাকে দুদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। শওকত ইসলাম শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আমরা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি, যা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
‘অগোচরে’ চট্টগ্রামে ঘাঁটি গাড়ছে রোহিঙ্গারা
চট্টগ্রামের স্থানীয়দের সঙ্গে ভাষা ও শারীরিক গঠনগত মিল থাকায় বাংলাদেশিদের থেকে রোহিঙ্গাদের আলাদা করা কঠিন। এছাড়া অসচেতনতার কারণে স্থানীয়রা রোহিঙ্গা পরিচয়কে ভিন্নভাবে না নেয়ায় ধীরে ধীরে স্থানীয়দের মধ্যে মিশে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এ সুযোগ নিয়েই চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার মতো অভিজাত এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে মাদকের কারবার শুরু করেছে রোহিঙ্গা পরিবারটি।
র্যাব কর্মকর্তা তুষার বলেন, শওকত মিয়ানমার ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্য। কক্সবাজার থেকে সরাসরি ইয়াবা নিয়ে এসে ব্যবসা করতেন তিনি। এ কাজে তাকে সহায়তা করতেন মোরজিনা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা ব্যবসার জন্য তারা তিন-চার মাস পরপর বাসা পরিবর্তন করতেন। সর্বশেষ চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের ৭৯ নম্বর বাড়িতে তাদের অবস্থান জানতে পেরে তাদের আটক করা হয়। এ সময় টাকার বান্ডিল জানালা নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুরে চান্দগাঁও আবাসিকের বি-ব্লকের ৭৯ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। প্রতিবেশীরা জানান, ওই দম্পতিকে দেখে কখনো বোঝা যায়নি তারা বাংলাদেশি নন। চট্টগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের মতোই চলাফেরা করতেন তারা। তবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের তেমন যোগাযোগ ছিল না।
ভবনের দারোয়ান মাহমুদ আলী জানান, মাস তিনেক ধরে পরিবারটি বাসা ভাড়া নিয়ে ছিল। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এবং শহরে তাদের ব্যবসা আছে বলে জানিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে কয়েক দিনের জন্য বাইরে যেতেন শওকত। কখনো বলতেন বাড়ি যাচ্ছেন, আবার কখনো বলতেন ব্যবসার কাজে যাচ্ছেন। এছাড়া তেমন একটা কথাবার্তা তার সঙ্গে হতো না বলে জানান মাহমুদ আলী।
কেয়ারটেকার আমান উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, তিন মাস আগে টু-লেট দেখে তাকে ফোনে করেন শওকত ইসলাম। এ সময় তিনি নিজেকে সাতকানিয়ার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। পরে দুই মাসের অগ্রিম টাকা নিয়ে তাদের বাড়ি ভাড়া দেয়া হয়। আবাসিকের কমিটিকে নিয়ম অনুযায়ী কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। আমরা তা দিয়েছিলাম। কিন্তু র্যাব জানিয়েছে ওগুলো সব ভুয়া।
তিনি বলেন, ‘বাড়ির মালিক মোরসেদ ইকবাল আরব আমিরাতে থাকেন। আমি থাকি লালখান বাজার। সব সময় মোবাইলে কথা বলেই বাড়ি ভাড়া দিই। কিন্তু এভাবে যে বাড়িতে রোহিঙ্গা ঢুকে যাবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। এখন থেকে বাড়ি ভাড়া দেয়ার আগে কাগজপত্র যাচাই করে নেব।’
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাউসার হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, শওকত ইসলাম যে রোহিঙ্গা, স্থানীয়দের অনেকেই তা জানতো।
কক্সবাজার থেকে সিএনজি সিলিন্ডারে ইয়াবা আনতেন তারা
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আলী আশরাফ তুষার জানান, বাংলাদেশে আসার পর থেকেই মাদক চোরাকারবারের সঙ্গে যুক্ত হন শওকত। তিনি একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে এক থেকে দুই মাস থাকতেন। এরপর আবার অন্য ফ্ল্যাটে চলে যেতেন, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খোঁজ না পায়। শওকত নিজে ইয়াবা পাচার করতেন, আবার চট্টগ্রামে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন।
তিনি আরও জানান, কক্সবাজার থেকে মিনি ট্রাক, বাস ও সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডারে করে ইয়াবা পরিবহন করতেন শওকত। মূলত এসব গাড়ি তেল ও গ্যাস দুটোতেই চলে। শওকতরা কক্সবাজার থেকে খালি সিলিন্ডারে ইয়াবা ভরে তা গাড়িতে ফিটিং করতেন। তেলের সাহায্যে ওই গাড়ি চালিয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হতো। পরে সিলিন্ডার কেটে ইয়াবা বের করে নিতেন তারা। জাগো নিউজ
মতিহার বার্তা ডট কম: ১০ নভেম্বর ২০২০
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.